পদ্মশ্রী পেলেন সদাই ফকিরের পাঠশালার জনক সুজিত মাষ্টার

26th January 2021 6:11 pm বর্ধমান
পদ্মশ্রী পেলেন সদাই ফকিরের পাঠশালার জনক সুজিত মাষ্টার


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : বয়স ছিয়াত্তরে গণ্ডী  ছাড়িয়ে গিয়েছে । ২০০৪ সালে স্কুলের  শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর লাভের পরেও শিক্ষা দান থেকে ছুটি নেননি  সুজিত চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের উত্তর রামনগর নিবাসী  অশীতিপর ‘মাস্টারমশাই’ নিজের বাড়িতেই খোলেন পাঠশালা । যা এলাকাবাসীর কাছে  ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’ নামেই পরিচিত ।  সেই পাঠশালায় ’বাৎসরিক ২ টাকা’ গুরুক্ষিনার বিনিময়ে  এলাকার ‘জনজাতি’ পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাদান করেচলা  সুজিত বাবু এবার পেলেন ‘পদ্মশ্রী’  খেতাব ।   সোমবার রাতে দিল্লি থেকে ফোন আসার পরেই ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত হতে চলেছেন বলে  সুজিত চট্টোপাধ্যায় জানতে পারেন । 
সদাই ফকিরের পাঠশালার জনকের এই সন্মান প্রাপ্তির খবরে উচ্ছশিত সমগ্র আউশগ্রামবাসী ।  তিনি  বলেন, "সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে । যিনি ফোন করেন তিনি  জানতে চান ,’আমি জনজাতি  পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের  পড়াই  কি না । সুজিত বাবু বলেন ,আমি উত্তরে বলি   জনজাতি পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদেই আমি পড়াই । এরপরেই আমাকে বলা হয় আমি আমি ‘পদ্মশ্রি’ খেতাব পাচ্ছি । “সুজিত বাবু বলেন , আমি হিন্দি ভালো বুঝি না । ধানবাদে থাকা আমার মেয়েকে এরপর বিষয়টি বলি । আমার মেয়ে  খোঁজ খবর নিয়ে রাতে আমায় ফোন করে আমায় জানায় আমি ‘পদ্মশ্রী ’ খেতাব পাচ্ছি । মার্চ মাসে পুরস্কার দেবে বলে জানিয়েছে।" এই খবর পেয়ে কেমন লাগছে মাস্টারমশাই ?উত্তরে সুজিত বাবু বলেন , সে রকম অনুভূতি এখনও হয়নি।  পুরস্কার গ্রহনের পর তা বলতে পারবো । আউশগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম উত্তর রামনগর । 
বাংলায় স্নাতকোত্তর সুজিত চট্টোপাধ্যায় ১৯৬৫ সালে গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন । শিক্ষকতা জীবনে স্কুল ছুটির পর পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের তিনি ’বিশেষ ক্লাস’ নিতেন । একই সঙ্গে জনজাতি পরিবারের শিশুদের স্কুলমুখী করার কাজও তিনি চালিয়ে গিয়েছেন । ২০০৪ সালে স্কুল শিক্ষক জীবন থেকে অবসর গ্রহনের পর সুজিত বাবু নিজের বাড়িতেই জনজাতী , সংখ্যালঘু ও দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের তিনি পাঠদান শুরু করেন । পেনশনের টাকার একাংশ খরচ করে তিনি পড়ুয়াদের বই খাতাও কিনে দেন । শিক্ষা দানের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে প্রবল  আপত্তি ছিল সুজিত বাবুর ।কিন্তু নাছোড় ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা গুরুকে  গুরুদক্ষিনা না দিতে পেরে আক্ষেপ করতো । সেই আক্ষেপ মেটাতে অবশেষে সুজিত মাস্টারমশাই নির্ধারণ করেন তাঁর গুরু দক্ষিনা বাৎসরিক ২ টাকা । গুরু দক্ষিনার এই অর্থও পড়ুয়াদের স্বার্থে খরচ করে দেন সদাই ফকিরের পাঠশালার শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে তাঁর ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা তিনশোরও বেশী । তাদের বেশীর ভাগই জনজাতি ও সংখ্যালঘু পরিবারের । সদাই ফকিরের পাঠশালায় ছাত্রীর সংখ্যাই সবথেকে বেশী ।  সুজিত বাবু মাধ্যমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস এবং উচ্চ মাধ্যমিক ও  স্নাতক স্তরে বাংলা পড়ান । জনজাতি পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা দানের পাশাপাশি ’থ্যালাসেমিয়া’ আক্রান্তদেরও তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেন ।এলাকাবাসীর  কাছে এমন এক মহতি শিক্ষকের নাম করলে  তারা জোড়হাত মাথায় ঠেকান । সেই সুজিত বাবু এবার ‘পদ্মশ্রী ’খেতাব পেতে চলেছেন জেনেই আপ্লুত তাঁর ছাত্র ছাত্রী ও গুনমুগ্ধরা । 

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।